সরকারিভাবে বাংলাদেশকে বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক কীটনাশক ডিডিটি মুক্ত ঘোষণা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রামের মেডিকেল সাব-ডিপো থেকে সাফল্যজনকভাবে ৫০০ টন ডিডিটি অপসারণ এবং বিশ্ব জীববৈচিত্র সম্মেলনে অর্জন উপলক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৯৮৫ সালে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৫০০ টন ডিডিটি পেস্টিসাইড আমদানি করেছিল। নিম্নমান বিবেচনায় আমদানি করা অব্যবহৃত বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক পেস্টিসাইড ডিডিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মেডিকেল সাব-ডিপোতে মজুত রাখা হয়।
উল্লিখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গ্লোবাল এনভাইরনমেন্ট ফেসিলিটির অর্থায়ন এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কারিগরি সহায়তায় পেস্টিসাইড রিস্ক ‘রিডাকশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ১০ ডিসেম্বর এ বিষাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণভাবে ফ্রান্সে রপ্তানি করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটছে, বছরে সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী এ সময় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই রপ্তানির ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব হয়েছে। স্টকহোম কনভেনশন কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য ডিডিটি রপ্তানির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূর্ণ হলো।
সংবাদ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ৭-১৯ ডিসেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনের অর্জন বিষয়ে আলোকপাত করে মন্ত্রী বলেন, এ সম্মেলনের মধ্যে হাই-লেভেল সেগমেন্টে বাংলাদেশের পক্ষে প্রদত্ত বক্তব্যে ২০২০ পরবর্তী গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে উন্নত বিশ্বকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহায়তা বাড়ানো এবং বিশ্বের মোট জিডিপির অন্তত এক ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যয় করতে আহ্বান জানানো হয়।
তিনি জানান, এবারের সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘লিভিং হারমোনি উইথ নেচার’ রূপকল্প এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জীববৈচিত্র্য এবং ইকোসিস্টেমের ক্ষতিসাধন রোধ ও রক্ষার অভিলক্ষ্য নিয়ে ‘কুনমিং-মনট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক’ গৃহীত হয়। ওই ফ্রেমওয়ার্কে চারটি অভীষ্টের আওতায় ২৩টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হলো–পৃথিবীব্যাপী ৩০ ভাগ স্থল এবং জলজ পরিবেশকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সব উৎস থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করা; উন্নত বিশ্ব থেকে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
ওই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দেশের ‘ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্রাটেজি অ্যান্ড একশন প্ল্যান’ আপডেট করা হবে।
আরও পড়ুন: সরিষা ফুলের হলুদ হাসিতে রঙিন যশোরে দিগন্তজোড়া মাঠ
মন্ত্রী জানান, সম্মেলনে সাসটেইনেবল ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেট, নেচার অ্যান্ড কালচার, কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন বায়োডার্ভিসিটি, বায়োডার্ভিসিটি অ্যান্ড এগ্রিকালচার, বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেইঞ্জ, ইনভেসিভ এলিয়েন স্পেসিজ, সিন্থেটিক বায়োলজি ইত্যাদি শিরোনামে আরও কয়েকটি ডকুমেন্টস গৃহীত হয়।
ওই ডকুমেন্টস নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে সভা করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
এছাড়া উন্নত বিশ্ব যাতে পর্যাপ্ত আর্থিক, কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে, সে লক্ষ্যে এগিয়ে আসে সেজন্য বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সম্মেলনে আহ্বান করেছে।
সে প্রেক্ষাপটে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি কর্তৃক ২০২৩ সালের মধ্যে গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক তহবিল (জিবিএফ ফান্ড) প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মন্ত্রী জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জিবিএফ বাস্তবায়নে তথা জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আব্দুল হামিদ ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।